Top Ad unit 728 × 90

image

বাস্তু ও জ্যোতিষ

বাস্তু ও জ্যোতিষ

মানব সভ্যতার বিকাশ মানুষের জন্ম, পরিবেশ ও বাসস্থানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। জ্যোতিষ মানুষের জন্ম ও তার জীবনযাত্রার পরিকল্পনার বিস্তারিত জ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় ঘটায়।অনুরূপভাবে বাস্তুশাস্ত্র মানুষের বাসস্থান সম্পর্কিত পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করে জীবনকে সমৃদ্ধিশালী করে।

জ্যোতিষশাস্ত্রের রয়েছে তিনটি মূল ধরা।গণিত, ফলিত এবং সংহিতা।গণিত অর্থাৎ অঙ্ক, ফলিত অর্থাৎ যা ফলে আছে বা ঘটছে এবং তৃতীয় ভাগটি হল সংহিতা অর্থাৎ সংকলন।বাস্তুশাস্ত্র এই সংহিতারই একটি অংশ।এ দিকে পুরাণ শাস্ত্রমতে বাস্তু আদতে জ্যোতিষেরই অঙ্গ।বলা হয়ে থাকে বাস্তু জ্যোতিষের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।জ্যোতিষের কর্ম কাল বা সময়কে কেন্দ্র করে।যে কারণে জ্যোতিষশাস্ত্রের পুরুষসূক্তে যে মানুষের কল্পনা করা হয়েছে তার অভিধান হল কালপুরুষ।জ্যোতিষমতে ১২টি রাশি হল কালপুরুষের ১২টি অঙ্গ।জ্যোতিষ যেমন সময় বা কাল নিয়ে কাজ করে তেমনই বাস্তুশাস্ত্র কাজ করে স্থান, আকার স্থাপত্য নিয়ে।মাননজীবনে দুটির প্রভাবই খুব গুরুত্বপূর্ণ।এ সম্বন্ধে “বরাহমিহির” তাঁর রচিত গ্রন' “যোগযাত্রা”-য় দুটি খুব সুন্দর ও সহজ উদাহরণ দিয়েছেন কাল স্থান নিয়ে।যেমন- কাক রাতের বেলায় পেঁচার দ্বারা আক্রান্ত ও নিহত হয়।কিন্তু এর ঠিক উলটো দৃশ্য দেখা যায় দিনেরবেলায়।দিনের বেলায় পেঁচা স্বয়ংই কাকের দ্বারা আক্রান্ত ও নিহত হয়ে থাকে।সময় যে কত বলবান তা আমরা এই উদারহরণটির সাহায্যে বুঝতে পারি।

অনুরূপ স্থান সম্বন্ধেও একটি সহজ উদাহরণ তিনি তাঁর বইতে দিয়েছেন।যেমন- শুকনো জায়গায় বা ডাঙায় কুমির সিংহের দ্বারা নিহত হয়।কিন' এর ঠিক বিপরীত কান্ড হয় কুমির যখন সিংহকে পানিতে পায়।তখন কুমির সিংহকে আক্রমণ করে এবং হত্যা করে।স্থান বা জায়গায় গুরুত্ব যে কতটা মানবজীবনকে প্রভাবিত করে তা ওপরের উদাহরণ থেকে আন্দাজ করা যায়।

পাঞ্চভৌতিক তত্ত্বেই বাস্তুশাস্ত্রের ভিত্তি নির্ভর করে আছে।এই পঞ্চভুতই জ্যোতিষের ভিন্ন অঙ্গ।আকাশে অবস্থিত বিভিন্ন তারামণ্ডল বারোটি রাশিতে বিভক্ত।আর এই রাশিগুলিই পঞ্চভূতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।মেষ, সিংহ, ধনু রাশির তত্ত্ব হল অগ্নি।বৃষ, কন্যা ও মকর রাশির তত্ত্ব পৃথিবী।মিথুন, তুলা ও কুম্ভ হল বায়ুতত্ত্ব।কর্কট, বৃশ্চিক ও মীন পানি তত্ত্বের রাশি।এই সকল রাশিই আকাশের বিভিন্ন তারামণ্ডলের সঙ্গে যুক্ত জ্যোতিষ ও বাস'শাস্ত্র উভয়ের মধ্যে দিকের বিশেষ গুরুত্ব আছে।

জ্যোতিষ শাস্ত্রের মহান গ্রন্থ “জাতক পারিজাত”-এ আটটি দিকের উল্লেখ আছে।অমর কোষে বিভিন্ন দিক্‌ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে,

গ্রহদিক্‌গ্রহদিক্‌
রবিপূর্বশনিপশ্চিম
শুক্রআগ্নেয়চন্দ্রবায়ব্য
মঙ্গলদক্ষিণবুধউত্তর
রাহুনৈর্ঋতবৃহস্পতিঈশান

ধর্মশাস্ত্রে দশটি দিকের এবং দশ দিক্‌পালের উল্লেখ আছে।বাস্তুশাস্ত্রেও অনুরূপ উল্লেখ আছে।জ্যোতিষশাস্ত্রে যে আটটি দিকে নয়টি গ্রহের কথা বলা হয়েছে, বাস'শাস্ত্র তাকে মেনে নিয়েছে।নীচের ছবির মাধ্যমে সেই দশ দিক্‌, দশ দিক্‌পাল এবং জ্যোতিষের নটি গ্রহের পরস্পরের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত তা দেখানো হয়েছে।

চিত্রঃ

কোষ্ঠী বা জন্মছকে বিভিন্ন দিক্‌ সম্বন্ধে গণনার সময় নীচের চিত্রের সাহায্যে ধারণা করা হয়।

চিত্রঃ

কোষ্ঠী তৈরি করতে সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ বিষয হয় ‘স্পষ্ট লগ্ন’।জন্মের সময় জন্মস্থানের আকাশ পরিমণ্ডলের অবস্থানই হল কোষ্ঠী বা জন্মকুণ্ডলী।স্পষ্ট লগ্নের ভিত্তি পূর্ব দিককেই গণ্য করা হয়।জন্মের সময়ই ওই স্থানে যে রাশি পূর্ব দিকের ক্ষিতিজে অবস্থিত, ওই রাশির অংশ কলা-বিকলা গণনা করে যে রাশিমান নির্ধারণ করা হয় সেটিই ‘স্পষ্ট লগ্ন’।একবার পূর্ব দিক্‌ জেনে নেওয়ার পর সকল দিককে কোষ্ঠীতে স্থাপন করা হয় এবং কোষ্ঠী তৈরি করা হয়।জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে বিভিন্ন রাশি ও বিভিন্ন দিকের অবস্থানকারী।

দিক্‌রাশি
পূর্ব দিকে অবস্থানকারীমেষ, সিংহ ও ধনু
পশ্চিম দিকে অবস্থানকারীমিথুন, তুলা ও কুম্ভ
উত্তর দিকে অবস্থানকারীকর্কট, বৃশ্চিক ও মীন
দক্ষিণ দিকে অবস্থানকারীবৃষ, কন্যা ও মকর


বিভিন্ন জ্যোতিষ গ্রন্থ অনুসারে এই সব রাশি যদি উপরোক্ত দিকে থাকে তা হলে এরা ‘দিগবল’ লাভ করে।অনুরূপভাবে বিভিন্ন গ্রহও পৃথক প্রথক দিকের গ্রহও নিযুক্ত হয়েছেন।নবগ্রহের শান্তি স্বস্তয়নাদি পদ্ধতিতে বিভিন্ন দিকের অধিপতি গ্রহ হল :

দিকঅধিপতিদিকঅধিপতি
পূর্বসূর্যপশ্চিমশনি
দক্ষিণ-পূর্বশুক্রউত্তর-পশ্চিমচন্দ্র
দক্ষিণমঙ্গলউত্তরবুধ
দক্ষিণ-পশ্চিমরাহু ও কেতুউত্তর-পূর্ববৃহস্পতি


চিত্রঃ

এইভাবেই জ্যোতিষশাস্ত্রে বিভিন্ন গ্রহ বিভিন্ন দিকে অবস্থিত হওয়ার দরুন গ্রহকে ‘দিগবলী’ বলা হয়।জ্যোতিষশাস্ত্রে কোষ্ঠীতে কেন্দ্রের অত্যন্ত গুরুত্ব থাকে।চারটি কেন্দ্রস্থান আছে।প্রথম, চতুর্থ, সপ্তম ও দশম ভাব।বাস্তুশাস্ত্রেও কেন্দ্রস্থান অর্থাৎ নীচের চিত্রে স্পষ্ট করে দেখানো হল :

চিত্রঃ

চতুর্থের কারক গ্রহ চন্দ্র ও বুধ।তৃতীয় ভাব বোঝায় জাতকের পরাক্রম, উদ্যম, পারিবারিক ও ভ্রাতৃসুখ, প্রবাসে সুখ, সজ্জা ও পবিত্রস্থান।এর কারক গ্রহ হচ্ছে মঙ্গল।মঙ্গল ভূমিকারক গ্রহ।আর চতুর্থ স্থান হচ্ছে ভূমি, ভবন, বাহন এবং সুখের সম্পর্কিত।এই সুখের জন্য চতুর্থেশ কেন্দ্রে বা ত্রিকোণে হওয়া অনিবার্য।এ ছাড়া চতুর্থভাবে শুভদৃষ্টি ও শুভ গ্রহের যূথী হওয়া বিশেষভাবে বাঞ্ছনীয়।দশাবিচার মতে জ্যোতিষশাস্ত্রে জাতকের জন্মপত্রের বা ছকের চতুর্থ স্থান থেকে জাতকের সুখ, সম্পত্তি, বাড়ি ও বাহন সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।চতুর্থ স্থানে গ্রহের অবস্থান অনুযায়ী জাতক ওই জিনিসগুলি কতটা অনায়াসে অর্জন করবে সে ব্যাপারে বলা যায়।

অভিজ্ঞ জ্যোতিষীকে বাস্তু সম্পর্কে কোনও প্রশ্নাদি করা হলে তিনি জাতকের জন্ম ছকের চতুর্থের ভাব, চতুর্থপতি লগ্ন থেকে কোথায় অবস্থান করছেন তা দেখে এবং ষোড়শবর্গের চতুর্থাংশের স্থান বিচার করে বলতে পারেন যে জাতকের স্বগৃহ লাভ কবে, কীভাবে এবং কীকরে সম্ভব।

ভূমি এবং বাড়ি প্রাপ্তিযোগ :
  • লগ্নপতি এবং সপ্তমপতি যদি চতুর্থভাবে থাকে তা হলে অনায়াসে গৃহলাভ হয়।
  • চতুর্থাধিপতি যদি সগৃহী এবং তুঙ্গ বা উচ্চ হয় তবে উত্তম বাড়ি প্রাপ্তি হয়।
  • চতুর্থপতি দশমে থাকলে ও শনির দ্বারা দৃষ্ট হলে পুরনো বাড়ি প্রাপ্তি হয়।
  • যদি ধনপতি, লগ্নপতি ও আয়পতি চতুর্থভাবে একসঙ্গে যূথী অর্থাৎ যোগ হয় তবে জাতক একাধিক বাড়ির মালিক হয়।
  • চতুর্থপতি যদি অষ্টমভাবে থাকে তা হলে শ্রেষ্ঠ বাড়ি প্রাপ্তি হয়।
  • যদি চতুর্থপতি এবং দশপতি পরস্পর স্থান বিনিময় করে তবে অতুল ভূমির ও বাড়ির মালিক হয়।
  • চতুর্থপতি পঞ্চমভাবে হলেও জাতক জমির মালিক হয়।
  • চতুর্থপতি সপ্তমভাবে থাকলে জাতক স্ত্রীর মাধ্যমে জমি বা বাড়ি প্রাপ্ত হয়।


আরো জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন >>>>>>>>>>>>>>>
বাস্তু ও জ্যোতিষ Reviewed by PIAS DEY on May 22, 2017 Rating: 5

No comments:

All Rights Reserved by আমার ভাগ্য © 2017 - 2023
Powered By Pias Dey, Designed by Pias Dey

আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.