Top Ad unit 728 × 90

image

মাঙ্গলিক দোষ ও তার প্রতিকার।

মঙ্গলের দোষ কাকে বলে ?

প্রথমে আমাদের  জানতে হবে মাঙ্গলিক দোষ বা ভ্রম দোষ কাকে বলে ? যার জন্ম কুণ্ডলীতে মঙ্গলের এই যোগ উৎপন্ন হয়েছে একমাত্র সেই বোঝে মঙ্গল গ্রহটি কত অমঙ্গল ডেকে আনতে পারে একটি জীবনে। 



জন্মকুণ্ডলীতে লগ্ন থেকে প্রথম , চতুর্থ , সপ্তম , অষ্টম , দ্বাদশ ভাবে যদি মঙ্গল গ্রহটি থাকে বা অবস্থান করে তখন তাকে মাঙ্গলিক দোষে বলা হয়। জোতিষ শাস্ত্রে প্রথম ভাব থেকে  শরীর , চতুর্থ ভাব থেকে গৃহ ও সুখ , সপ্তম ভাব থেকে ব্যাবসা , বিবাহিতা জীবন ও শারীরিক সম্পর্খের সুখ , অষ্টম ভাব থেকে জীবনের বাধাবিঘ্ন , মৃত্যু শোখ , আয়ু , দ্বাদশ ভাব থেকে খর্চা , উটকো ব্যয় , বিদেশ যাত্রা বিচার করা হয়ে থাকে এবং এই ঘর গুলিতেই মঙ্গল অবস্থান করলে অশুভ ফল প্রদান করবে। এই ১ ভাবে , ৪ ভাবে , ৭ ভাবে  , ৮ ভাবে ও ১২ ভাবে মঙ্গল থাকা অবস্থায় অশুভ গ্রহ বা পাপগ্রহ যুক্ত হলে অশুভের মাত্রা অনেক অংশে বেড়ে যায়। পাশাপাশি শুভ গ্রহ অবস্থান করলে শুভ প্রভাবের মাত্রা বাড়বে।

মঙ্গলের দোষ ও তার প্রভাব।    

আমাদের জোতিষ শাস্ত্র মতে মঙ্গলকে পাপগ্রহ হিসেবেই ধরাহয়ে থাকে এবং আগেই জানলাম গ্রহটি জন্মকুণ্ডলীতে  প্রথম , চতুর্থ , সপ্তম , অষ্টম ও দ্বাদশ ঘরে থাকলে তার সম্পূর্ণ অশুভ শক্তি প্রদান করেথাকে জাতক বা জাতিকার জীবনে।

কোনো জাতক বা জাতিকার জন্ম কুণ্ডলীতে প্রথম ভাবে বা লগ্নে মঙ্গল থাকলে বা মঙ্গলের দৃষ্টি পড়লে জাতক বা জাতিকার শরীর-স্বাস্থ সব সময় খারাপ থাকে , স্বভাবের মধ্যে উগ্রতা থাকে , এরা হবে জেদি।

চতুর্থ ভাবে মঙ্গল থাকলে বা দৃষ্টি পড়লে দৈহিক সুখ নষ্ট হয় , মায়ের শরীর - স্বাস্থ খারাপ থাকবে , গৃহ সুখ নষ্ট হবে ও বাড়ির মধ্যে রোগ বৃদ্ধি পাবে।

সপ্তম ভাবে মঙ্গল থাকলে বা দৃষ্টি দিলে সেই সকল জাতক জাতিকাদের বিবাহিত জীবন সুখ থাকেনা , পারিবারিক অশান্তি লেগেই থাকবে , ব্যবসায় সমস্যা বাড়তেই থাকে।

অষ্টম ভাবে মঙ্গল থাকলে বা মঙ্গল দৃষ্টি দিলে জাতক বা জাতিকার জীবনে ঝামেলা বাড়বে , আইনি ঝামেলায় ফেসেযাবে এবং জীবনে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হবে।

দ্বাদশে মঙ্গল থাকলে বা তার দৃষ্টি পড়লে জাতক বা জাতিকার মানসিক দুর্চিন্তা বা টেনসন বাড়বে , আর্থিক ব্যয়ের মাত্রা প্রচুর পরিমানে বেড়েযাবে।

 তাই যে সকল লোকেদের  জন্মকুণ্ডলীতে এই পাঁচটি ঘরে   অবস্থান করবে সেই সকল লোকেদের মাঙ্গলিক বলে ধরা   হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লগ্ন ছাড়া চন্দ্র রাশির  ১ , ৪ ,   ৭ , ৮ , ১২ ভাবে মঙ্গল থাকলে একই ফল ধরা হয়ে থাকে। আমাদের জোতিষ শ্বাস্ত্রে মঙ্গল , শনি , রবি , রাহু ও কেতু , জোতিষ শাস্ত্রে নৈসর্গিক পাপগ্রহ ধরা হয়ে থাকে। এই গ্রহগুলি নিজের দৃষ্টি দ্বারা বা অবস্থানে ফলে সেই ভাবটিকে নষ্ট করে দিতেপারে। তাই বলাহয়  ১ , ৪ , ৭ , ৮ , ১২ ভাব গুলিতে মঙ্গলের সাথে এই পাপগ্রহ থাকলে বা দৃষ্টি দিলে অশুভের মাত্রা আরো অনেক অংশে বেড়ে যায়। তাই বিবাহের আগে এইসকল গ্রহদেরও বিচার করে নেয়া দরকার। বিবাহিতা জীবন বা বিবাহ বিচার করতে হলে শুক্রকে অবশ্যই ধরা দরকার কারণ শুক্র রাতি সুখ বা শারীরিক সুখ বিচার করা হয়ে থাকে।
যদি শুভ গ্রহ এই মঙ্গলের সাথে ১ , ৪ , ৭ , ৮ , ১২ ভাবে থাকে তবে অশুভ প্রভাব নষ্ট হয়ে যায় এবং মাঙ্গলিক দোষ ভঙ্গ হয়।

জন্ম কুণ্ডলীতে যা যা থাকলে মাঙ্গলিক দোষ ভঙ্গ হবে সেটি জানব।

১) যোটক বিচারের সময় পাত্র বা পাত্রীর জন্মকুণ্ডলীতে ১ , ৪ , ৭ , ৮ , ১২ ভাবে মঙ্গলের সাথে শনি অবস্থান করলে মাঙ্গলিক দোষ নাশ হয়।
২) মেষ লগ্নের বা রাশির ক্ষেত্রে মঙ্গল লগ্নে থাকলে , বৃশ্চিক লগ্নের বা রাশির চতুর্থ ভাবে মঙ্গল থাকলে , মকর লগ্নের বা রাশির সপ্তম ভাবে মঙ্গল থাকলে , কর্কট লগ্ন বা রাশির অষ্টম ভাবে মঙ্গল অবস্থান করলে এবং ধনু লগ্ন বা রাশির দ্বাদশ ভাবে মঙ্গল থাকলে , মাঙ্গলিক দোষ ভঙ্গ হবে।


৩) পাত্র ও পাত্রীর যেকোনো একজনের জন্মকুণ্ডলীতে মাঙ্গলিক দোষ বর্তমান থাকলে সাথে অন্যের জন্মকুণ্ডলীতে মাঙ্গলিক দোষ না থেকে ১ , ৪ , ৭ , ৮ , ১২ ভাবে পাপগ্রহ অবস্থান করে তাহলে মাঙ্গলিক দোষের অশুভ মাত্রা কমে যাবে।
৪) সপ্তান অধিপতি বা শুক্র বলবান হয়ে সপ্তম ভাবের সাথে যুক্ত বা দৃষ্টি দিলে মাঙ্গলিক দোষ খর্ব হয়।
৫) মঙ্গল স্ব-রাশিতে , মূল ত্রিকোণে বা উচ্চ রাশিতে থাকলে মাঙ্গলিক দোষ নাষ হয়।

মাঙ্গলিক দোষ থাকলে কি কি নিয়ম মানতে হবে।

পাত্র বা পাত্রীর জন্ম কুণ্ডলীতে মঙ্গল খারাপ হলে , দাম্পত্য জীবনে কষ্ট , স্বামীর বা স্ত্রীর শারীরিক পীড়া এবং অতিরিক্ত অশুভ প্রভাবে বৈধব্য যোগ কখনো কখনো দেখাযায়। এছাড়াও পারিবারিক বা বিবাহিতা জীবনে কলহ , বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক , উভয়ের প্রতি ঘৃণা , শারীরিক রোগ বৃদ্ধি হয়েথাকে। এই যোগ জন্ম কুণ্ডলীতে থাকলে খালি যোটক বিচার করলেই চলবে না। কোনো ভালো জোতিষী দ্বারা এই মাঙ্গলিক দোষ ভঙ্গ করিয়েনেয়া আবশ্যক।

১) নিজের আচরণ ঠিক রাখুন।
২) মিথ্যা কথা বলবেন না।
৩) মিথ্যা সাক্ষী দেবেন না।
৪) কাউকে বাজে ভাষায় কথা বা গালাগালি দেবেন না।
৫) মদ্য পান না করাই ভালো।
৬) প্রতি মঙ্গল বার মাছ বা মাংস খাওয়া উচিত নয়।
৭) বিনা মূল্যে কোনো জিনিস নেবেন না।
৮) যাদের সন্তান নেই তাদের থেকে কোনো সম্পত্তি কিনবেন না।
৯) যে বাড়ির মুখ দক্ষিণদিকে সেই বাড়িতে থাকবেন না।
১০) কোনো কালো , মাথায় টাক বা নিরসন্তান লোকেদের থেকে দূরে থাকুন।
১১) প্রতিদিন সকালে মধু পান করবেন।
১২) মিষ্টি বানিয়ে নিজে খান এবং অন্যদের খাওয়ান।
১৩) নিজের জন্মদিনে অন্তত ১০ জনকে মিষ্টি খাওয়ান।
১৪) বোন বা যেকোনো মেয়েদের মিষ্টি খাওয়ান।
১৫) নিজের স্ত্রীকে সন্মান দিন এবং তার সুখ - সুবিধার দিকে নজর রাখুন।
১৬) আত্মীয় দেড় সাথে সাত ভাব বজায় রাখুন।
১৭) বিধবাদের সাহায্য ও সেবা করুন।
১৮) হাতির দাঁতের তৈরী জিনিস বা লোহার অস্ত্র বাড়িতে রাখবেন না।

মাঙ্গলিক দোষ নিবারণের বিশেষ কিছু উপায় বা টোটকা।


১) প্রতি মঙ্গলবার হনুমানজীর পূজা ও সাথে হনূমান চালিসা পাঠ করুন বা শুনুন।
২) হনুমানজির প্রসাদ সকলকে দান করুন।
৩) হনূমান মন্দিরে লাল বস্ত্র বা সিঁদুর দেন করুন উপকার পাবেন।
৪) প্রত্যহ গায়েত্রী মন্ত্র পাঠ করুন।
৫) দূর্গা মাতার একটি ছবি বাড়িতে রাখুন।
৬) রামাযানের সুন্দর কান্ড পথ করুন বা শুনুন।
৭) একটি লাল রুমাল সবসময় সাথে রাখুন।
৮) রুপার বলা বা আংটি জোড়া ছাড়া ধারণ করুন।
৯) সোনার আংটিতে একটি রক্তপ্রবাল অনামিকাতে ধারণ করুন।
১০) হনূমান বা বাঁদর কে যেকোনো মঙ্গলবার খাওয়ালে এই দোষ কেটে যায়।
১১) আটা দিয়ে রুটি বানিয়ে কালো কুকুরকে খাওয়ান।
১২) প্রতি মঙ্গলবার স্রোতের জলে মিষ্টান্ন বিসর্জন দিন।
১৩) একটি কাঁচা মাটির দেয়াল বানিয়ে সেটা ভেঙে ফেলুন।
১৪) বিবাহের পূর্বে কোনো ভালো জোতিষী দ্বারা পূজা পাঠ করিয়ে নিন।

*** যদি আপনার জন্মকুণ্ডলীতে মাঙ্গলিক দোষ বর্তমান থাকলে ঘাবড়াবেন না , সঠিক প্রতিকারে মাঙ্গলিক দোষ সম্পূর্ণ রূপে ভাঙা করা যায়।  কেবল চাই সঠিক পরামর্শ ও সঠিক প্রতিকার।
মাঙ্গলিক দোষ ও তার প্রতিকার। Reviewed by PIAS DEY on September 08, 2019 Rating: 5

No comments:

All Rights Reserved by আমার ভাগ্য © 2017 - 2023
Powered By Pias Dey, Designed by Pias Dey

আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.