Top Ad unit 728 × 90

image

বিবাহ মিলনে যোটক বিচারের গুরুত্ব ।


বিবাহের আগে পাত্র পাত্রীর জন্ম ছক মিলিয়ে যে বিচার করা হয় জ্যোতিষশাস্ত্রে তাকে যোটক বিচার বলে। নারী পুরুষের সামাজিক মিলনকে
আমরা বিবাহ বলি। এই বিবাহের মাধ্যমে গড়ে ওঠে সংসার, সন্তান-সন্তুতি এবং সমাজ। এই পথ ধরে এগোয় মানব সভ্যতা। যৌবন কালে পাত্র পাত্রীর উপযুক্ত মিলন বিবাহের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় পরবর্তী প্রজন্মের সন্তান সন্তুতি। অর্থাৎ মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল বিবাহিত জীবন। আর এই বিবাহিত জীবনের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন উত্তম পাত্র পাত্রীর মিলন। পাত্র পাত্রীর উত্তমমিলন বিচার করতে জ্যোতিষশাস্ত্রে যোটক বিচার এক গুরুত্বপূর্ণ পথ। যোটক বিচারে সাধারনত আটটি পথ ধরে গননা করা হয়ে থাকে যেমন- বর্ণকুট, বশ্যকুট, তারাকুট, যোনিকুট, গ্রহমৈত্রীকুট, গনমৈত্রীকুট, রাশিকুট, ত্রিনাড়ীকুট। এই আটটি কুট নিয়ে সংপ্তি আকারে কিছু আলোচনা করা হল।


বর্নকুট- উচ্চ বর্নের পাত্রীর সাথে নিম্ন বর্ণের পাত্রের বিবাহ অশুভ কর। এতে দাম্পত্য অসন্তোষ, অকাল বৈধব্য, শারীরিক অসুস্থতা, সন্তানের কারনে মন কষ্ট ছাড়াও সন্তান গন পিতা মাতার অবাধ্য হয়ে থাকে। অনেকেেত্র অকাল বৈধব্যদশা ভোগ করতে হয়।
বশ্যকুট- পাত্র পাত্রীর রাশি দ্বিপদ চতুস্পদ প্রভৃতি শক্র মিত্রের প্রভাবে দাম্পত্য জীবনে কলহ, বিবাদ, মামলা, মকদ্দমা একনকি দাম্পত্য বিচ্ছেদ পর্যন্ত ঘটে যেতে পারে। সম্ভাব্য েেত্র দ্বিতীয় বিবাহ ঘটায় বশ্যকুট বিচারের অশুভ প্রভাবের ফলে।
তারাকুট- পাত্র পাত্রীর জন্ম নত্রের গরমিলের প্রভাবে বিবাহিত জীবনের সুখ, দুঃখ নির্ধারিত হয়ে থাকে। তারা কুটের শুভ প্রভাবে বিবাহের পর গৃহে ভাগ্যলক্ষ্মীর কৃপা বর্ষণ হয়, আর অশুভ প্রভাবে দাম্পত্য অসন্তোষ সহ দুঃখ, কষ্ট, শোক, জরা, ব্যাধি, দৈন্য, ও দারিদ্র দশার কারণ হবেন।
যোনিকুট- পাত্র পাত্রীর জন্ম নত্র অনুযায়ী ব্যাঘ্র, সিংহ, গরু, মহিষ, বিড়াল, ইদুর, সর্প প্রভৃতি যোনি নির্ধারন করা হয়। এখানে বাঘ-গরু, বিড়াল- ইদুর বিপরীত যোনি এদের মধ্যকার বিবাহ মিলনে অকালে স্ত্রী বিয়োগ বা অকাল
বৈধব্যের প্রবনতা দেখা দেয়। এছাড়া স্বামী কতৃক স্ত্রী হত্যা ও স্ত্রী কতৃক স্বামী হত্যা পর্যন্ত ঘটতে পারে বিরূপ যোনিকুটের ফলে।
গ্রহমৈত্রীকুট- পাত্র পাত্রীর রাশি অধিপতি গ্রহের শক্র মিত্রতার উপর নির্ভরশীল। মিত্রতার প্রভাবে বিবাহিত জীবন সুখ, সমৃদ্ধি, অর্থ, সম্মানে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর অশুভ প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম ছাড়াও স্বামী স্ত্রীর দুর্ঘটনা জনিত অঙ্গপ্রতঙ্গ হানী সহ শেষ জীবন কোন প্রকারেই শুভকর হয় না।
গনকুট- জন্ম নত্র অনুযায়ী পাত্র পাত্রীর দেব, নর এবং দেবারীগন বিচার্য হয়ে থাকে। নরগনের পাত্র আর দেবারী বা রাসগণের পাত্রীর সাথে বিবাহে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন বা তার বিপরীতটাও ঘটতে পারে। এক কথায় পাত্র পাত্রীর সমৃদ্ধিময় জীবন যাপনের জন্য গনকুট এর শুভ মিলনের গুরুত্ব অপরিসীম।
রাশি কুট- পাত্র পাত্রীর জন্ম ছকের চন্দ্রের অবস্থান জনিত রাশির শুভ অশুভ প্রভাব দাম্পত্য জীবনে সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে। শুভ প্রভাবে শুভ ফল আর অশুভ প্রভাবে শোক, দুঃখ, দুর্দশা সহ দাম্পত্য জীবন বিষিয়ে তোলে।
ত্রিনাড়ীকুট- ত্রিনাড়ীকুট বিচারের শুভ প্রভাবে সংসার সমাজ ও সভ্যতার শুভ যোগাযোগ তৈরী করে দাম্পত্য জীবনে শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হয়। আর বিপরীত প্রভাবে অশান্তির তীব্র অনল জ্বলতে থাকে। বিবাহের পর সামাজিক কলহ, বিচ্ছেদ, একাকী জীবন যাপন, পিতামাতাসহ সংসারের আত্মীয় পরিজন ছেড়ে বনবাস বা বিদেশ বাস প্রভৃতি ঘটে, একমাত্র ত্রিনাড়ী কুটের অশুভ প্রভাবের ফলে।
আজকাল প্রায়ই দেখা যায় পাত্র বা পাত্রী চাই বলে বৃহৎ বৃহৎ বিজ্ঞাপন। উচ্চশিতিা, প্রকৃতসুন্দরী, সুশ্রী, সু-স্বাস্থ্যবতী, সু-মুখশ্রী, গৃহকর্মে নিপূনা, সঙ্গীতজ্ঞা সহ আরও কত কি। সর্বশেষ বলা হয় চাকুরি অগ্রগন্য। বিপরীতে পাত্রীপ পাত্র চাই বিজ্ঞাপনে আর অতসব লিখতে পারে না, বড়জোর লেখে ভাল চাকুরীজীবি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অগ্রগণ্য। এখানে কিন্তু মানব মানবীর মনের মিল বিবেচনায় রাখা হয় না। দেখা হয় না পাত্র পাত্রীর চারিত্রিক, মানসিক ও বৌদ্ধিক দিকটা। অথচ দাম্পত্য জীবন সুখের করতে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হল পাত্র পাত্রীর মনের মিলন তারপর চারিত্রিক, মানসিক ও বৌদ্ধিক দিক। তবেই জীবনতরী তীরে ভিড়বে। অন্যথায় অথৈ সাগরে পড়ে হাবুডুবু খাবে তাতে সন্দেহ নেই। তাই জ্যোতিষশাস্ত্রে যোটক বিচারের গুরুত্ত্ব সর্বাধিক। নিন্মে পাঠকদের সহজে বোঝার জন্য রাশিঅনুসারে কিছু শুভ অশুভ যোটক বিচার সংেেপ বর্ণনা করা হল। মনে রাখবেন শুধু রাশির মিল হলেই পাত্র পাত্রীর আদর্শ বিবাহ হবে না। সার্বিক সুখকর গ্রহাবস্থান আদর্শ বিবাহ মিলনে জরুরী।
মেষরাশির পে অশুভ হল কন্যা ও বৃশ্চিক রাশির পাত্র পাত্রী। শুভ হল কর্কট, সিংহ, ধনু ও মকররাশি। অন্যান্য রাশির মিলন মধ্যম ফলদায়ক।
বৃষ রাশির পে অশুভ হল তুলা ও ধনু রাশির পাত্র পাত্রী। শুভ হল সিংহ, কন্যা, মকর ও কুম্ভ রাশি। অন্যান্য রাশির মিলন মধ্যম ফলদায়ক।
মিথুনরাশির পে অশুভ হল বৃশ্চিক ও মকর রাশির পাত্র পাত্রী। শুভ হল কন্যা, তুলা, কুম্ভ ও মীন রাশি। অন্যান্য রাশির মিলন মোটামুটি মধ্যম। মনে রাখবেন মিথুন রাশিটি একটি অভিশপ্ত রাশি। এই রাশির সঙ্গে যে রাশিরই পাত্র পাত্রীর বিবাহ হোক না কেন প্রকৃত মনের মিলন কখনই হয়না। যার ফলে দাম্পত্য জীবন সুখের হবার সম্ভাবনা খুবই কম।
কর্কটরাশির পে অশুভ হল ধনু ও কুম্ভ রাশির পাত্র পাত্রী। শুভ হল তুলা, বৃশ্চিক, মীন ও মেষ রাশির। অন্যান্য রাশির মিলন মধ্যম ফলদায়ক।
সিংহরাশির পে অশুভ হল মকর ও মীন রাশির পাত্র পাত্রী। শুভ হল বৃশ্চিক, ধনু, মেষ ও বৃষ রাশি। অন্যান্য রাশির মিলন মধ্যম ফলদায়ক।
কন্যারাশির পে অশুভ হল মকর ও মেষ রাশির পাত্র পাত্রী। শুভ হল ধনু ও বৃষ রাশি। অন্যান্য রাশির মিলন মধ্যম তথাপিও শুভই বলা যায়। এদের মধ্যকার বিবাহে তেমন অসুবিধা প্রায়ই হয়না।
তুলারাশির পে অশুভ হল মীন ও বৃষ রাশির পাত্র পাত্রী। শুভ হল মকর, কুম্ভ ও কর্কট রাশি। অন্যান্য রাশির মিলন মধ্যম ফলদায়ক।
বৃশ্চিকরাশির পে অশুভ হল মেষ ও বৃষ রাশির পাত্র পাত্রী। শুভ হল কুম্ভ, মীন, কর্কট ও সিংহ রাশি। অন্যান্য রাশির মিলন মধ্যম ফলদায়ক।
ধনুরাশির পে অশুভ হল বৃষ ও কর্কট রাশির পাত্র পাত্রী। শুভ হল মীন, মেষ, সিংহ ও কন্যা রাশির। অন্যান্য রাশির মিলন মধ্যম ফলদায়ক।
মকররাশির পে অশুভ হল মিথুন ও সিংহ রাশির পাত্র পাত্রী। শুভ হল মীন, মেষ, কন্যা, ও তুলারাশি। অন্যান্য রাশির মিলন মধ্যম ফলদায়ক।
কুম্ভরাশির পে অশুভ হল কর্কট, সিংহ ও কন্যা রাশির পাত্র পাত্রী। শুভ হল বৃষ ও তুলা রাশি। অন্যান্য রাশির মিলন মধ্যম ফলদায়ক।
মীনরাশির পে অশুভ হল মেষ ও তুলা রাশির পাত্র পাত্রী। শুভ হল মীন, কর্কট, কন্যা, বৃশ্চিক ও ধনু রাশি। অন্যান্য রাশির মিলন মধ্যম ফলদায়ক।
এছাড়া শুভ যোটক হল পাত্রের রাশির পঞ্চমে পাত্রীর রাশি হলে। বিপরীত ভাবে পাত্রীর েেত্রও ঠিক একই ফল প্রদান করবে। যেমন মেষের সাথে সিংহ, বৃষের সাথে কন্যা, মিথুনের সাথে তুলা, কর্কটের সাথে মীন, ধনুর সাথে মেষ, মকরের সাথে বৃষ, কুম্ভের সাথে মিথুন এবং মীনের সাথে কর্কট। জ্যোতিষ শাস্ত্রে এই যোগকে পঞ্চ পল্লবক নামে অভিহিত করা হয়। এছাড়া পাত্র পাত্রীর উভয়ের একই রাশি হলে যোটক বিচারে শুভ ফল প্রদান করে।
প্রজাপতির নির্বন্ধ যোগ হল সর্বশ্রেষ্ঠ যোগ। পাত্র পাত্রীর জন্ম ছকে এই যোগ থাকলে বিবাহিত জীবন ধন-ধান্যে, সম্পদ-সম্পত্তিতে, সন্তান-সন্তুতিতে পরিপূর্ণ ও আনন্দময় হয়ে ওঠে। এই যোগ বিবাহের েেত্র বৈধব্য দশা, ভৌম দোষ সহ রাশি, লগ্ন, নত্র যাই হোক না কেন, কোন রূপ বিচারের প্রয়োজন পড়ে না। এক কথায় যোটক বিচার এই প্রজাপতির নির্বন্ধ যোগে মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
অশুভ যোটক যেমন পাত্রের রাশির অষ্টমে পাত্রীর রাশি হলে সেই বিবাহ অবশ্যই পরিত্যাগ করা উচিৎ। যেমন পাত্রের রাশি মেষ হলে তার অষ্টম রাশি বৃশ্চিক, বৃষের সাথে ধনু, মিথুনের সাথে মকর, কর্কটের সাথে কুম্ভ, সিংহের সাথে মীন, কন্যার সাথে মেষ, তুলার সাথে বৃষ, বৃশ্চিকের সাথে মিথুন, ধনুর সাথে কর্কট, মকরের সাথে সিংহ, কুম্ভের সাথে কন্যা, এবং মীনের সাথে তুলা।
বিপরীতে পাত্রীর রাশির ষষ্টে পাত্রের রাশি হলে সে বিবাহ অতিশয় শুভ ফল প্রদান করে। এই যোগকে জ্যোতিষশাস্ত্রে মিত্রষড়ষ্টক যোগ বলে। যেমন পাত্রীর রাশি মেষ আর পাত্রের রাশি কন্যা, বৃষের সাথে তুলা, মিথুনের সাথে বৃশ্চিক, কর্কটের সাথে ধনু, সিংহের সাথে মকর, কন্যার সাথে কুম্ভ, তুলার সাথে মীন, বৃশ্চিকের সাতে মেষ, ধনুর সাথে বৃষ, মকরের সাথে মিথুন, কুম্ভের সাথে কর্কট এবং মীনের সাথে সিংহ। এ ব্যাপারে শিার্থীরা যেন গোলমাল পাকিয়ে না বসেন। যেমন পাত্রের মেষ রাশি আর পাত্রীর কন্যা রাশি বা তুলা রাশির পাত্রের সহিত মীন রাশির পাত্রী যেন না হয়ে যায় তাহলে মহা সর্বনাশ ঘটে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। মনে রাখবেন মিত্রষড়ষ্টক যোগ উল্টা হলে বিপরীত ফল প্রদান করবেই করবে। (আবারও বলি পাত্রীর রাশির ষষ্টে পাত্রের রাশি হবে) এর বিপরীত বা উল্টা যোগের বিবাহে স্বামী স্ত্রী হবে বিরুদ্ধ মতাবলম্বী, সুখের সংসারে নেমে আসবে দুঃসহ দুঃখ, বেদনা, বিচ্ছেদ ও বৈধব্যদশা। এই যোগের বিবাহ স্বয়ং দেবতাগনেরও পরিত্যাজ্য।
ভৌম দোষ বা মাঙ্গলিক দোষ। পাত্রপাত্রীর জন্ম কুন্ডলীর লগ্নে, চতুর্থে, ষষ্ঠে, অষ্টমে এবং দ্বাদশে মঙ্গল অবস্থান করলে জ্যোতিষশাস্ত্রে একে ভৌম বা মাঙ্গলিক দোষ বলে। এই দোষ দাম্পত্য জীবনে বিদ্রোহ, ফাঁটল, অশান্তি, বিচ্ছেদ ছাড়াও পাত্রের েেত্র বিপতœীক এবং পাত্রীর েেত্র বিবাহিত জীবনে স্বামীর অকাল জীবনাবসান এর ইঙ্গিত প্রদান করে। তাছাড়া এদের বিবাহিত জীবনে কোন এক সময়ে দাম্পত্য-অশান্তির মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পায় যা পাত্র পাত্রীকে
মৃত্যুতুল্য করে তোলে। এক কথায় উভয়েরই মনের মৃত্যু ঘটে যায়। তবে এই ভৌম বা মাঙ্গলিক দোষ পাত্র পাত্রীর উভয়ের জন্মকুন্ডলীতে থাকলে তাদের বিবাহিত জীবন সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং উভয়েই দীর্ঘায়ু লাভ করে ছাড়াও সমাজে মানব সভ্যতার অগ্রগতি সাধন করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
বিবাহ মিলনে যোটক বিচারের গুরুত্ব । Reviewed by Amar Vagya on January 31, 2018 Rating: 5

No comments:

All Rights Reserved by আমার ভাগ্য © 2017 - 2023
Powered By Pias Dey, Designed by Pias Dey

আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.