Top Ad unit 728 × 90

image

কৃত্তিম উপায়ে তৈরী রত্ন

                        কৃত্তিম উপায়ে তৈরী রত্ন

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কথায় বলে মানুষের অসাধ্য কিছু নেই মানুষ অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে ও করছে। রত্ন-পাথরের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই, কৃত্রিম উপায়ে রত্ন-পাথর তৈরী করতেও সক্ষম হয়েছে মানুষ।

রত্নের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরদিনের। সুপ্রাচীন কাল হতে রত্ন-পাথর ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মানুষ বিশেষ ভাবে মূল্য দিয়েছে রত্নকে আজও দিচ্ছে। পান্না, হীরা, মুক্তা, পোখরাজ, ওপ্যাল, গোমেদ ইত্যাদি রত্ন-পাথরগুলোর বেশীর ভাগই খনিজ পদার্থ।যুগ যুগ ধরে প্রচন্ড চাপ ও তাপে ভূগর্ভে সৃষ্টি হয়ে থাকে রত্ন-পাথর।সে কারণেই প্রাকৃতিক বা খাঁটি রত্নগুলো দুসপ্রাপ্য ও মূল্যবান।অনেক সাধারণ মানুয়ের ক্রয়ক্ষমতা ও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

তাই আধুনিক প্রযুক্তি আজ এগিয়ে এসেছে রত্নকে সুলভ করার কাজে। ফলে তৈরী করা সম্ভব হয়েছে কৃত্রিম রত্ন, যে গুলো গুণে, সৌন্দর্যে প্রাকৃতিক রত্নের মতই।কৃত্রিম রত্ন তৈরী হওয়ার ফলে রত্ন পাথর চলে এসেছে সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের ভিতর এবং পাওয়া যাচ্ছে দেশে দেশে।

কৃত্তিম রত্ন তৈরির প্রচেষ্টাটি প্রচীনকালেও ছিল। প্রচীন মিশরীয় এবং রোমানদের তৈরী বিভিন্ন রকম নমুনা যাদুঘরে দেখা যায়।তবে সেগুলো গুণগত মানে ও রূপে অক্ষম।সত্যিকার অর্থে সাফল্য এসেছে সামপ্রতিক কালে বিজ্ঞানের গবেষণাগারে।কৃত্রিম ভাবে তৈরী রত্ন পাথরকে কয়েকটি সম্পূর্ণ আলাদা দলে বিভক্ত কর যায়।যেমন:

(১) ইমিটেশন অর্থাৎ নকল রত্ন।
(২) সিনথেটিক অর্থাৎ সংশ্লেষিত রত্ন এবং
(৩) কৃত্তিম ভাবে তৈরী ডাবলেট রত্ন।

(১) ইমিটেশন বা নকল রত্ন প্রাকৃতিক রত্নের অনুকরনেই করা হয়। চোখে দেখার মিলটুকু ছাড়া আর কোন অর্থেই এরা প্রাকৃতিক বা আসল রত্নের মতো সাধারণতঃ হয় না।এতে একই রকম দেখতে অন্য জিনিসকে সুকৌশলে রত্নের মতো করে তোলা হয়।কিছুটা আসলের মতোই এই রত্ন প্রচুর তৈরী করে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।এদিক থেকে এদের উপযোগিতা রয়েছে বৈকি।

ইমিটেশন বা নকল রত্নের অধিকাংশ তৈরী হয় বিশেষ ধরনের কাঁচ থেকে। এ কাঁচ যেন খুব বিশুদ্ধ হয়, ক্ষুদ্র বুদবুদ ইত্যাদি থেকে মুক্ত হয় সে ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নেওয়া হয় প্রাকৃতিক বা খাঁটি রত্নের মত অনুরূপ রঙ দেওয়ার জন্য গলিত অবস্থায় এ কাঁচের সঙ্গে বিভিন্ন রকম ধাতব অক্সাইড মেশানো হয়, যেমন- নীলের জন্য কোবালট অক্সাইড, সবুজের জন্য কুৎপ্রিক অক্সাইড, বেগুনীর জন্য ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড ইত্যাদি।কাঁচকে বিভিন্ন তলে ঘষে কাটা প্রাকৃতিক রত্নের রূপ ও ঔজ্জ্বল্য দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।এ সব কাটা তলের নিম্ন পৃষ্ঠগুলোতে অনেক সময় আয়নার মত প্রতিফলকের ব্যবস্থা করা হয় যাতে প্রাকৃতিক বা আসল রত্নের দীপ্তিও খানিকটা আসে।এ ধরনের নকল রত্নকে অবশ্য প্রাকৃতিক রত্ন থেকে আলাদা করা মোটেই কোন কঠিন কাজ নয়।এরা কম শক্ত বলে অনায়াসে এদের গায়ে আঁচর কাটা যায় সাধারণ একটি ফাইল বা উকোর সাহায্যেই।এদের তাপ পরিবাহকত্ব কম বলে প্রাকৃতিক রত্নের তুলনায় এদেরকে স্পর্শে উষ্ণ অনুভূত হয়।আলোর প্রতিসরণাংকের ক্ষেত্রেও এদের সঙ্গে প্রাকৃতিক রত্নের অনেক তফাৎ।তাছাড়া এক্সরে ছবি নিলেই বুঝা যায় যে নকল রত্নের সত্যিকার কোন কেলাসিত রূপ নেই।

(২) অপর দিকে সংশ্লেষিত রত্ন সব অর্থেই প্রাকৃতিক রত্নের অনুরূপ।প্রকৃতিতে ধীরে ধীরে তৈরী না হয়ে এটি তৈরী হয়েছে বিভিন্ন উপাদানের সংশ্লেষণে যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এই অর্থেই শুধু এটি কৃত্রিম।বস্তুগত দিক থেকে, যেমন রাসায়নিক গঠন, কেলাসন, আলোকগুণ এবং অন্যান্য সব ভৌত গুণে এরা প্রাকৃতিক রত্নের সঙ্গে অভিন্ন।

সংশ্লেষিত রত্ন তৈরী অনেক বেশী ব্যয় সাপেক্ষ, তাই শুধু দামী রত্নগুলোর ক্ষেত্রেই এটি করা হয়।আজকাল সংশ্লেষিত হীরা, চুনি, নীলা, পান্না ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে।

বহু চেষ্ঠার পর ১৯৫৫ সনে সুইডেনে প্রথম কৃত্রিম হীরার সংশ্লেষণ সম্ভব হয়।বিশুদ্ধ কার্বনে গঠিত হীরার গঠন যে সরল হলেও কার্বনকে এর কেলাসন রূপে আনা সহজ সাধ্য নয়।অতি উচ্চ চাপে এবং ২৫০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস উচ্চ তাপে দীর্ঘ সময় কার্বনকে রেখে কৃত্রিম হীরা তৈরী সম্ভব হয়েছে।সামপ্রতিক প্রযুক্তি অবশ্য কিছুটা সহজতর হয়েছে এবং এই ব্যাপারে অগ্রণী হয়েছে জাপান।সংশ্লেষিত হীরার একটি সুবিধা হলো একে ইচ্ছা মত রংগীন করা সম্ভব নানা রকম বিজাতীয় বস'র স্বল্প অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে।প্রথম দিকে কৃত্রিম হীরার আকার এত ছোট হতো যে তা রত্ন-পাথর হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী ছিল না।কিন্তু সত্তরের দশক থেকে আকারে ও সৌন্দর্যে রত্ন হওয়ার উপযুক্ত হীরা সংশ্লেষিত হচ্ছে এদের উৎপাদন ব্যয়ও ধীরে ধীরে কমে আসছে।চুনী ও নীলা আসলে একই রত্ন-পাথর, শুধু এদের রংটুকু ছাড়া অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের প্রবাহের মাধ্যমে সৃষ্ট তীব্র উত্তাপে এলুমুনিয়াম অক্সাসাইডের গুঁড়াকে গলিয়ে এবং পরে তাকে কেলাসিত হতে দিয়ে চুনি ও নীলা সংশ্লেষিত করা হয়।তৈরীর সময় সঙ্গে পরিমাণ মতো ক্রোমিয়াম অক্সাইড মেশালে তা চুনির লাল রং দেয়।আবার এর বদলে টিটানিয়াম অক্সাইড দেওয়া হলে সৃষ্টি হয় নীল রং এর নীলা।বহু চেষ্টার পর ১৯৩০ সালে প্রথম পান্না তৈরী সম্ভব হয়।

(৩) কৃত্রিম ডাবলেট রত্ন গুলো হলো এতে উপরে সত্যিকার রত্নের পাতলা করে কাটা একটু আবরণ থাকলেও তাকে জুড়ে দেওয়া হয় নকল অথবা নিকৃষ্ট রত্নের ব অংশের সঙ্গে।ডাবলেট রত্ন তৈরী করার কৌশলটিও কিন্তু বেশ লক্ষণীয়।এতে উপরের পাতলা দামী রত্নের অংশ নীচের নকল অংশের সঙ্গে উপযুক্ত আঠা দিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়।হীরার ডাবলেটের ক্ষেত্রে পাতলা আসল হীরা, জিরকন অথবা রক ক্রীষ্টালের মত অপেক্ষাকৃত সস্তা কিন্তু অনুরূপ কেলাসের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়।এতে কিন' হীরার বর্ণচ্চটাটি পাওয়া যায় না।অন্যান্য দিক থেকে একই রকম দেখতে হলেও চুনি, নীলা বা পান্নার ডাবলেটের জন্য সাধারণতঃ উপরে এলমেডাইন নামক স্বচ্ছ কেলাসের পাতলা আবরণ এবং নীচে সঠিক রং এর কাঁচ ব্যবহৃত হয়।

কৃত্রিম রত্ন আধুনিক প্রযুক্তির একটি চমৎকার সুকৌশল।ইমেটেশন বা নকল রত্ন ও কৃত্রিম ভাবে তৈরী ডাবলেট রত্ন গুলো বিচার বিশ্লেষণে ফল লাভে অনুপযুক্ত ।আর সংশ্লেষিত রত্নগুলো অনেকের মতে বেশী পরিমাণে ধারণ বা ব্যবহার আসল রত্নের অণুরুপই ফলদায়ক। গুণাগুণই যেখানে লক্ষ্য সেখানে কৃত্রিম রত্ন কি আর প্রাকৃতির বা খাঁটি রত্নের মত ফলাফল দিতে পারে? গ্রহের অশুভত্বে ও রোগ ভোগের প্রতিকারার্থে প্রাকৃতিক বা আসল রত্ন পাথর ব্যবহার একান্ত আবশ্যক।

কৃত্রিম রত্ন সম্পর্কে আলোচনা করা হল- যাতে জাতক/জাতিকা প্রাকৃতিক বা আসল রত্ন - পাথর ক্রয় বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতারিত হতে না হয়। রত্ন সঠিক ভাবে নির্বাচন সত্যিই একটু কঠিন, তাই অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা অভিজ্ঞ জ্যোতিষের পরামর্শ বাঞ্চনীয়।
কৃত্তিম উপায়ে তৈরী রত্ন Reviewed by PIAS DEY on May 22, 2017 Rating: 5

No comments:

All Rights Reserved by আমার ভাগ্য © 2017 - 2023
Powered By Pias Dey, Designed by Pias Dey

আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.